লিচু খাওয়ার উপকারিতা-লিচুর বিচি খেলে যা হয়
লিচু গরমকালের একটি মজাদার ফল। গরমকালে খুব অল্প সময়ের জন্য এই ফলটি পাওয়া যায়। এই ফলে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। এ ফলটি খেতেও যেমন মজা তেমন পুষ্টিতেও ভরপুর। লিচু খাওয়ার উপকারিতা এবং লিচুর বিচি খেলে যা হয় তা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো। যারা এ সম্পর্কে জানতে চান তারা আমার নিজের আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন।
আমরা এখানে আরো আলোচনা করেছি লিচু খাওয়ার উপকারিতা এবং লিচু বেশি খেলে কি হয় এসব সম্পর্কে যদি জানতে চান আপনারা নিচের আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন।
ভূমিকা
লিচু এমন একটা ফল যা ছোট বড় সকলেই পছন্দকরে। লিচু আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান দিয়ে থাকে। লিচু খেলে শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের পানির সাম্যতা বজায় থাকে প্রচুর পরিমাণ পানি। লিচুতে ফাইবার এবং পানিও রয়েছে যা শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
লিচু এখন বাজারে উঠেছে কিন্তু লিচু চাইলেই যখন তখন পাওয়া যায় না শুধু এই গ্রীষ্মকালেই পাওয়া যায়।
লিচুর বিভিন্ন উপকারিতা
লিচুতে ফাইবার থাকে যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পেটের যত প্রকার সমস্যা রয়েছে ,বদহজম পেট ফাঁপা তা দূর করে। লিচুতে পানি থাকে যা শরীরকে হাইড্রেট রাখে। লিচু আমাদের বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন দিয়ে শরীরকে সুস্থও রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।
- শরীরের বিভিন্ন রোগ দূর করে এবং কাটা ছেঁড়া সমস্যা দূর করে।
- বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। লিচু নিয়মিত খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং বলিরেখা সব দূর হয়ে যায়। বয়সের ছাপ দূর হয়ে যায়।
- লিচুতে পটাশিয়াম পাওয়া যায়। লিচুতে প্রচুর পানিও রয়েছে যা শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং শরীরে যত দূষিত পদার্থ রয়েছে তা নিঃসরণ করতে সাহায্য করে। ফলে শরীরে ইউরিন এসিডের পরিমাণ কমে যায় এবং শরীর সুস্থ থাকে।
- লিচু একমাত্র ফল যেখানে কালারির পরিমাণ খুবই কম। লিচু খেলে ওজন বাড়ার কোন সম্ভাবনায় নেই। তাই আমরা যারা চাই শরীরের ওজন না বাড়ুক তারা নিয়মিত লিচু খেতে পারি।
- লিচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যার কারণে লিচু খেলে পেট ভরা ভরা মনে হয় এবং শরীরের ওজনও ঠিক থাকে।
- হার্টের জন্য এই লিচু খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে। কারণ নাইট্রিক অক্সাইড তৈরীর কারখানা লিচু। নাইট্রিক অক্সাইড শরীরে রক্ত চলাচল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লিচু আমাদের হার্ট ভালো রাখে।
- লিচুতে থাকে ক্যালসিয়াম,ফসফরাস,ম্যাগনেসিয়াম যা হাড়ের জন্য খুবই উপকারী।
লিচু খাওয়ার কারনে যেসব সমস্যা হয়
লিচুর রসে থাকে ক্যালসিয়াম,ফসফরাস,ম্যাগনেসিয়াম যা হাড়ের জন্য খুবই উপকারী। লিচু ছোট-বড় সকলে খেতে খুব পছন্দ করে। এটি একটি মৌসুমী ফল যা সব সময় পাওয়া যায় না। লিচুতে রয়েছে বিভিন্ন খনিজ উপাদান যা শরীরের বিভিন্ন পুষ্টির প্রভাব পূরণ করে থাকে। লিচু খাওয়ার অপকারিতা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- লিচু যেমন পুষ্টিগুনে ভরপুর তেমন লিচু বেশি খেলে সমস্যা হতে পারে। লিচু দিনে ১০ থেকে ১২ টার বেশি খাওয়া উচিত না। কারন বেশি লিচু খেলে শরীরের ওজন অনেক বেড়ে যেতে পারে এবং শরীরে চিনির মাত্রাও দিন দিন বেড়ে যেতে পারে।
- আর যাদের প্রেসার অনেক লো তারা যদি অনেক বেশি লিচু খায়। তাদের বুক ধরফর করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে । তাই যাদের প্রেসার লো তারা লিচু কে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। লিচু খুব পুষ্টি গুনাগুন সম্পন্ন একটি ফল হলেও বেশি লিচু খেলে শরীরে বিষক্রিয়ার মত বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।
- লিচু খেলে অত্যাধিক হারে ওজন বেড়ে যেতে পারে। যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা লিচু খেলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা হয়। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের লিচু না খাওয়াই ভালো। লিচু ছোট-বড় সকলেরই খুব পছন্দের একটি ফল।
লিচুর বিচি খেলে যেসব উপকার হয়
লিচু অনেক সুস্বাদু একটা ফল। লিচু খেতেও বেশ মজা আমরা সকলেই লিচুর বীজ ফেলে দেই। অনেকেই আমরা জানি না বীজ কিভাবে খেতে হয়। আসলে সরাসরি খাওয়া যায় না বীজ বিভিন্ন উপায়ে খেতে হয়।
- ত্বকের জন্যঃ লিচুর বীজ খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে। কারণ বীজে রয়েছে পলিফেনালস নামক জৈব-যৌগ যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। যেমন দাগ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- হার্টের জন্যঃ লিচুর বীজে রয়েছে এমন সব যৌগ যা আমাদের হার্টের জন্য খুবই ভালো ভূমিকা পালন করে।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনঃ আমাদের শরীরে দুই ধরনের কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। একটা হল ভাল কোলেস্টেরল আর একটা হলো খারাপ কোলেস্টেরল। লিচু খারাপ কোলেস্টেরল এর ঘনত্ব অনেক কমিয়ে নিয়ে আসে।
- শর্রকরা নিয়ন্ত্রনঃ শর্করা নিয়ন্ত্রণে লিচু গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। লিচুর বীজে এর যে নির্যাস আছে সেটাতে এমন সব যৌগ রয়েছে। যার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অনেক সময় যারা মূলত ডায়েট করেন এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন তাদের খাবারে লিচু রাখা খুব দরকার।
লিচু বেশি খেলে যা হয়
যাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে। তাদের একটু ভেবেচিন্তে লিচু খাওয়া উচিত। যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তাদের রক্তচাপ অনেকটা কমিয়ে ফেলে লিচু। লিচু যাদের রয়েছে তারা খেলে তাদের শরীরে রক্তচাপ আরও কমে গিয়ে মাথা ঘোরা থেকে শুরু করে বুক ধরফর করে এবং শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। তাই তাদের লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকায় উত্তম।
লিচু খেলে কি গ্যাস হয়
সব সময় আমাদের খাবার খাওয়ার পর লিচু খাওয়া উচিত। কারণ খালি পেটে লিচু খেলে আমাদের শরীরে গ্যাস যেতে পারে,বদ হজম,পেট ফাঁপা থেকে শুরু করে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই আমরা একদিনে প্রচুর পরিমাণ লিচু খাব না। বেশি লিচু খেলে শরীরের গ্যাস্টিকের সমস্যা অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে। তাই দিনে ১০ থেকে ১২টির বেশি লিচু খাওয়া উচিত নয়।
লিচু খাওয়ার অপকারিতা
লিচু খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি অনেক অপকারিতাও রয়েছে। সুস্বাদু বলে যে আমরা পরিমাণের অতিরিক্ত খাব এমনটা করা উচিত না। অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্য কখনোই ভালো না। লিচু আমাদের পরিমান মত খেতে হবে। বেশি লিচু খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লিচুতে জরুরী যেসব উপাদান। যেমন ক্যালসিয়াম,প্রোটিন এসব উপাদান থাকে না, এসব না থাকার কারণে শরীরে স্বাভাবিক যে কার্যক্ষমতা সেটি নষ্ট হয়ে যায়। গ্যাসের সমস্যা অতিরিক্ত বেড়ে যায়। শরীরে চিনির মাত্রা অনেক বেশি হয়ে যায়। এই লিচু খেতে মজা লাগলেও আমাদের পরিমান মত বুঝে খাওয়া উচিত।
শেষ কথা
লিচু খাওয়ার উপকারিতা এবং বেশি খেলে কি হয়। লিচু খেলে কি কি অপকারিতা রয়েছে আসব আমরা নিচে আলোচনা করেছি। আপনাদের যদি আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লেগে থাকে। তাহলে এটি আপনাদের বন্ধু-বান্ধবের মাঝে অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং কমেন্টের মাধ্যমে নিজেদের মতামত আমাদের জানাতে পারেন।
কমেন্টের মাধ্যমে আপনাদের মতামত জানান
comment url